somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিছনাকান্দি : জল পাহাড়ের কাব্য

২৩ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজিকের রোদ ঘুমায়ে পড়িয়া ঘোলাট-মেঘের আড়ে,
কেয়া-বন পথে স্বপন বুনিছে ছল ছল জল-ধারে।
কাহার ঝিয়ারী কদম্ব-শাখে নিঝ্ঝুম নিরালায়,
ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে অস্ফুট কলিকায়!
...
বিছানাকান্দি, বিছনাকান্দি, বিছানকান্দি- নাম নিয়ে সংশয় থাকলেও বর্ষায় এর রূপ দেখে বিমোহিত হবেন না এমন মানুষ কোথায়। স্থানীয়দের মুখে প্রচলিত দুটি গ্রামের নাম- বিছনা এবং অপরটি কান্দি, দুইয়ে মিলে- বিছনাকান্দি। মেঘ-পাহাড়ের এই মিতালি সিলেটের অদূরেই। শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিক্সা ছাড়ে হাদারপারের উদ্দেশে। সালুটিকর হয়ে এ যাত্রায় ভাড়া মাথাপিছু ৮০ টাকা। পাঁচজন ধরে একটাতে তাই চাইলে হিসাব করে রিজার্ভও নেয়া যেতে পারে। যাওয়া আসার সমস্যা নেই। রাস্তা মোটামুটি ভালো। হাদারপার বাজারে ফেরার গাড়িও যথেষ্ট। হাদারপারে পৌঁছে যাবেন কমবেশি দেড় ঘণ্টায়। মোটামুটি জমজমাট বাজার। যে কাউকে বিছনাকান্দির রাস্তা জানতে চাইলে বাতলে দেবে। পথ ধরে হাটলে মাত্র ৩০ মিনিট। এ পথেই চোখে পড়বে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়গুলো। শিলংয়ের খাসিয়া পল্লী। আর পাহাড় ? কবির ভাষায়, যেখানে আকাশে হেলান দিয়ে আছে পাহাড়। অপূর্ব এই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে করতে চলে আসবেন পিয়াইন নদী তীরে। নামাপাড়া গুদারা ঘাটে দুই টাকায় নদী পাড়ি দিয়ে চলে যান ওপারে। শুকনো মৌসুমে যা হেটেই পার হওয়া যায় সেই নদীর বর্ষায় রূপ দেখলে ভালো সাতারুও ভয় পাবে। নদী পার হলেই আপনি বিছনাকান্দি গ্রামে পা রাখলেন। এ পথে বর্ষায় গ্রামের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হবে মিনিট পনের। আর শুকনো মৌসুমে নদীর ধার ধরে হেটে গেলে পথ কমে যাবে। মনে রাখবেন দুই পথ দুই সময়ে ব্যবহার হয়, তাই একটু সময় কমবেশি লাগে। বিশ্বাস করুন, বিছনাকান্দির খোলা প্রান্তরে যখন আপনি আর পাহাড় মুখোমুখি দাড়াবেন, তখন অজানা এক মিথস্ক্রিয়ায় আক্রান্ত হবে আপনার মন।


পারলে নদী পেরিয়ে ওপারে পাথর বাথানে চলে যান। যদিও আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে এই পাথরগুলো সব ডুবে যায় পাহাড়ি ঢলে। তাই বর্ষায় যারা যেতে চান, তাদের জন্য আদর্শ সময় বর্ষার শুরুর ক’টা দিন। তখন পানি, পাথর, মেঘ, সবুজ সব একসাথে পাওয়া যায়। শুকনো মৌসুমে হেটেই অনেকদূর যাওয়া যায়। তখন পানি থাকে সর্বোচ্চ হাটু পর্যন্ত।
যেখানে গিয়ে পাথর আর লাইমস্টোন দেখতে পাবেন, সেটা মূলত নো ম্যানস ল্যান্ড। নদীর এপারে বাংলাদেশ ওপারে ভারত। পিয়াইনের এই জীবনরেখাই বিভক্ত করেছে মানচিত্রকে। এখানে আপাতত প্রতি সোম আর বৃহস্পতিবার বসে সীমান্ত হাট। শুকনো মৌসুমে জায়গাটাকে অনেকটা জাফলংয়ের মত মনে হয়। কিন্তু বর্ষায়, একেবারেই ভিন্ন চিত্র। কক্সবাজারের পর পানির এমন উন্মাতাল গর্জন সমতলে পাওয়া সম্ভব না। অবশ্য পাহাড়ে বেশকিছু ঝরণা আর জলপ্রপাত এমন গর্জন শুনেছি। তারপরও এখানে মেঘের মিতালি বেশ উপভোগ্য। সাথে এর নিরিবিলি অবস্থান। সময়টা কখন উড়ে চলে যাবে টেরই পাবেন না।



তাই সম্ভব হলে সারাটা দিন হাতে নিয়ে বের হন বিছনাকান্দি দেখতে। পরে সময় থাকলে চলে যেতে পারেন পানতুমাই/পাংতুমাই ঝর্ণা দেখতে। এজন্য বিছনাকান্দি থেকে ট্রলারে চলে যেতে পারেন রিজার্ভে। সাধারণত জনপ্রতি ১০০ টাকা করে নেয়, নয়তো হাদারপার বাজারে গিয়ে গুদারা পার হোন। ওপার থেকে মোটর সাইকেলে চলে যান ঝর্ণা দেখতে। সেখান থেকে আপনি দুইভাবে সিলেট শহরে ফিরে যেতে পারেন। এক. পানতুমাই/পাংতুমাই থেকে গোয়াইনঘাট হয়ে সিলেট। এক্ষেত্রে গোয়াইনঘাটে অনেক সিএনজি অটোরিক্সা বা লেগুনা পাওয়া যায় আর দুই. পানতুমাই/পাংতুমাই থেকে আবারো হাদারপার এসে এখান থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বা আপনার নিয়ে যাওয়া বাহনে চেপে সিলেট শহরে। তবে যারা পরের দিন রাতারগুল দেখতে চান তাদের জন্য আদর্শ অপশন


এক.। কেননা কোনমতে গোয়াইনঘাটে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারলে এখান থেকে ট্রলার ভাড়া করে আপনি চলে যেতে পারেন সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলে।


***
* ঢাকার ফকিরাপুল বা মহাখালী থেকে শ্যামলী, এনা, হানিফ, সোহাগ ইত্যাদি বাস ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে।
* সিলেটে যেখানেই নামুন, চলে যান আম্বরখানায়।
* আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিক্সায় হাদারপার বাজারে।
* হেটে গুদারা, তারপর নদী পার হয়ে বিছনাকান্দি।
* গ্রামের হাটা পথ দুইভাবে গেছে বিছনাকান্দি পাহাড়ের দিকে, প্রথমটি বাজারের মধ্য দিয়ে অপরটি বাজারে না ঢুকে সোজা গেলে খোলা প্রান্তর/মাঠ।
* যে ভাবেই যান। পিয়াইন নদীর তীরে চলে আসবেন। পারলে নদী পার হয়ে শিলং পাহাড়ের কাছে পাথুরে বাথানে চলে যান।

কিছু পরামর্শের ধৃষ্টতা :
১। মুরগী ধর জবাই কর টাইপের মানুষ সবখানেই আছে। তাই আপনার কষ্টের টাকায় ওদের কামড় বসানোর সুযোগ না দিতে ইনফো এন্ড অফার ক্রস চেক করুন।
২। তথ্যের ভাটা পড়লে যে কোন শহরে প্রেসক্লাব আদর্শ জায়গা। কেননা ভালো সাংবাদিক অবশ্যই ভ্রমনপিপাসু। আর দুর্গম এলাকায় খেয়াল করুন চায়ের দোকান, সেলুন কিংবা বাজার জমজমাট কিনা। এ জায়গাগুলো আপনাকে তথ্যের দিক থেকে অনেকদূর এগিয়ে দিতে পারে।
৩। মৌসুম অনুযায়ী ব্যাগেজ রাখার চেষ্টা করুন। বর্ষায় ইলেকট্রনিক পণ্য বহনে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৪। সীমান্ত এলাকায় নিয়মন মেনে চলুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:১৪
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×